এক রাজা ও তার বিশ্বস্ত কর্মচারী!


এক দেশের এক রাজা ছিল খুবই কঠোর প্রকৃতির। তার রাজকার্য পরিচালনার জন্য নিয়োজিত ছিল অগনিত রাজ-কর্মচারী। এতোগুলো কর্মচারীর ভিতর তার কোনো কর্মচারী যদি তার রাজকার্য করতে গিয়ে কোনো ভুল করতো, তাহলে তিনি তাদের কঠিনতম শাস্তি দিতেন। তার কাছে ভুলের কোনো ক্ষমা নেই। রাজার এক বিশ্বস্ত কর্মচারী প্রায় ১০ বছর ধরে তার রাজকর্ম পালনের জন্য নিয়োজিত ছিল।

একদা তার এ বিশ্বস্ত কর্মচারী তার আদেশ পালনে ভুল করে বসলো। কর্মচারী তার ভুলের জন্য রাজার কাছে খুবই আকুতি করলো। কিন্তু রাজার কাছে তো ভুলের কোনো ক্ষমা নেই। ফলস্বরুপ রাজা তার দেহকে কুকুর দিয়ে ভক্ষন করানোর জন্য প্রহরীদেরকে আদেশ করলো। কর্মচারীকে হত্যা করার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হলো। কর্মচারী যখন দেখলো যে, তার আর রক্ষা নেই, তখন সে রাজার কাছে শুধু তার একটি ইচ্ছা পূরন করার জন্য ফরিয়াদ জানালো ফরিয়াদটি হলো যে, হুজুর আমাকে মাত্র ১০ দিন সময় দিন, আমি এই ১০ দিন কুকুরগুলোকে মনের মতো পেট পুরে খাওয়াবো।

তখন রাজা তার এ কথা শুনে বললো যে, যেহেতু তুমি আমার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলে তাই তোমাকে এই ১০ দিন সময় দেয়া হলো। কিন্তু মনে রেখ মাত্র ১০ দিন।

এই ১০ দিন ঐ কর্মচারী কুকুরগুলোকে খুব আদর যত্ন করে খাওয়ালো।

১০ দিন সময় শেষ হয়ে গেল!

তাই রাজার সেই আদেশ পালনের জন্য প্রহরীরা নিয়মানুযায়ী ওই আগ্রাসী কুকুর গুলোর কাছে ওই কর্মচারীকে নিক্ষেপ করলো।

কিন্তু দেখেন কুকুরগুলো দৌড়ে এসে ওই কর্মচারীর হাত -পা চাটা শুরু করলো। এ অবস্থা দেখে তো রাজা হতবাক! মাথা গরম, এ কি ব্যাপার! কি হলো কুকুরগুলোর? প্রহরীরা শত চেষ্টা করেও কুকুরগুলোকে রাগাতে ব্যর্থ হন।

কিছুক্ষনপর ওই কর্মচারী উঠে দাড়িয়ে রাজাকে বললো যে, হুজুর ১০ বছর আপনার সেবা করে আমি কি পেলাম? কিছুই পেলাম না। মাত্র ১ দিনের ভুলের প্রতিদান পেলাম মৃত্যুদন্ড।

আপনার কাছে আমার কোনো মূল্যই নেই।

কিন্তু দেখেন মাত্র ১০ দিনের সেবা-শুশ্রুশা পেয়ে কুকুরগুলো আমাকে কিভাবে সম্মান দিচ্ছে, প্রতিদান দিচ্ছে। আমার সাথে কুকুরগুলো বিশ্বাস ঘাতগতা করে নি। আপনার প্রহরীরা শত চেষ্টা করেও কুকুরগুলোকে রাগাতে ব্যর্থ হন।

এ কথা শুনে রাজার মনে অনুশোচনা জাগ্রত হলো। সে মনে মনে ভাবলো মাত্র ১০ দিনের সেবা পেয়েই কুকুরগুলো তার মনিবকে কত সম্মান করছে। তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে নি।

কিন্তু আমি এটা কি করতে চেয়েছি? যে কর্মচারী প্রায় ১০ বছর আমার হুকুম তামিল করতো,সেবা-শুশ্রুশা করতো তাকেই আমি…কথাগুলো ভেবে রাজা মনে মনে লজ্জ্বাবোধ করলো।

ফলস্বরুপ রাজা তার কর্মচারীকে মাফ করে দিল। সে তার ভুল বুঝতে পেরে কর্মচারীকে বুকে টেনে নিল।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *