“হ্যাঁ বলো উত্তম। সব রেডি? টাইম ঠিক ৮ টা কিন্তু। “
“ইয়েস ম্যাম। সব কথা হয়ে গেছে। তবে রুটটা একটু চেঞ্জ হয়েছে। একটা মিছিল আছে তাই বাধ্য হয়ে…”
“ওকে ওকে। সে পরে দেখে নিচ্ছি। যে পেপার গুলো নিতে বলেছিলাম সঙ্গে থাকে যেন। চল ৮ টায় দেখা হচ্ছে। “
ফোনটা সোফায় ফেলে হাতঘড়িটা পরে নিল অয়ন্তিকা। আজ একটা বড়ো সড়ো মিটিং আছে, আজকের মিটিংটা সাকসেসফুল হওয়া ভীষণ ভীষণ জরুরি। খানিকটা দুধ কর্নফ্লেক্স একটা বাটিতে নিয়ে নিল ও, এখন কোনোরকমে এটাই গলাধঃকরণ করতে হবে। আর কিছু খাওয়ার মতো সময় ও নেই, মানসিকতাও নেই। কোনোদিন টেনশন করে না ও, তবে আজ একটু হলেও নার্ভাস ও। লতা মাসি আসতে আসতে এখনও এক ঘন্টা। ইচ্ছে করেই আগে আসতে বলেনি মাসিকে। মাসি থাকলে এতক্ষণে জোগাড়যন্ত্র করে অয়ন্তিকাকে খেতে বসিয়ে দিতো। মাসির মেয়েটা মারা যাওয়ার পর থেকে মায়ের মতোই খেয়াল রাখে অয়ন্তিকার। ওর ও শূণ্যস্থানটা পূরণ হয়। মায়ের সাথে দেখা হয় ন মাসে ছ মাসে। কিছুতেই ওর কাছে এসে থাকতে চায় না। কতবার বলেছে ও, তাও কোনো লাভ হয়নি। চামচটা মুখে তুলতে তুলতেই জানলার পাল্লা টা সজোরে ধাক্কা মারলো, একটু অন্যমনস্কই ছিল অয়ন্তিকা। বাইরে যে বেশ মেঘ ঘনিয়েছে এতক্ষণ খেয়ালই করেনি ও। সেই সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট। সেই হাওয়াতেই পাল্লাটা পড়ল, জানলার সামনের শোপিসটা গড়াগড়ি খাচ্ছে মাটিতে। ভাগ্যিস ভাঙেনি। তুলে রাখতে গিয়ে তাকালো শোপিসটার দিকে। এটা ওকে রাম গিফট করেছিল প্রথম বার। নিজের মনেই খানিক হেসে জানলাটা বন্ধ করে দিলো এবার ও। আজ এতটা জার্নি তার উপর এই মেঘলা আবহাওয়া ওর খুব পছন্দের। ওদের ফ্ল্যাটের আকাশছোঁয়া উচ্চতার সাথে পাল্লা দিয়ে এখনও কোনো ফ্ল্যাট নেই এদিকটায়। যত নীচে চোখ যায় সবুজ গাছগাছালি, ব্যস্ত রাস্তা আর ব্যস্ত শহর। জোরে একটা শ্বাস নিল ও। নাহ আর দেরি করা যাবে না। রামকে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিল ঝট করে। রাস্তায় টাওয়ার না থাকলে ও আবার অয়ন্তিকাকে ফোন এ না পেয়ে টেনশন করবে। আর এখনো রামের ঘুম থেকে ওঠার সময় হয়নি, তাই আর ফোন করে ঘুমটা ভাঙালো না ও। তাড়াতাড়ি নিজে রেডি হতে লাগলো অয়ন্তিকা, আর ১৫ মিনিট পরই উত্তম চলে আসবে।
“ম্যাম খেয়ে দেখতে পারেন, এখানকার চা টা কিন্তু দারুণ।” বলে হেসে তাকাল উত্তম অয়ন্তিকার দিকে। চা এর নেশা কোনোকালেই নেই ওর, খুব ঠান্ডায় ঠেকায় পড়ে কখনো সখনো খায়। অয়ন্তিকা কাঁচের ভিতর থেকেই মাথা নেড়ে তাড়াতাড়ি করতে বলল ইশারায়। ড্রাইভার কাকা আর উত্তম ধাবাটার ভিতরে চলে গেল দ্রুত বিল মেটাতে। ওরা সকা ল থেকে কিছু খেয়ে আসেনি, একটু দাঁড়িয়ে চা জলখাবার খেল। অয়ন্তিকা বার বার ঘড়ি দেখছিল, আকাশটা এখন একটু পরিষ্কার তবে কতক্ষণ এরকম থাকবে বলা মুশকিল। যত তাড়াতাড়ি পৌঁছানো যাবে একটু রেস্ট নিয়ে মিটিং এ বসা যাবে। ও রাস্তার খাবার বিশেষত এসব রোডসাইড ধাবার খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলে। সঙ্গে শুকনো খাবার আছে দরকার হলে খেয়ে নেবে না হয়। ফোনটা একবার চেক করল। না রামের কোনো কল মেসেজ নেই এখনও । মেইলটা একবার চেক করে নিল, ওদিকে উত্তমরা এদিকেই আসছে ততক্ষণে। গাড়ি থেকে নামেনি আর ও, কিন্তু এখন বাইরেটা তাকিয়ে মনে হল নামাটা দরকার ছিল। মেঘলা আকাশ, চারপাশের স্থানীয় মানুষগুলো সকাল থেকেই নিজেদের রুজি রুটির জোগাড়ে নেমে পড়েছে, দোকানের ঝাঁপ খুলে সবাই খদ্দের সামলাতে ব্যস্ত। আশেপাশে ছোট খাটো দোকান কটা। তবে ঝোড়ো হাওয়া বইছে খুব, সেই হাওয়ায় দোকানের সামনের ত্রিপল প্রায় উরু উরু। সামনেই অনেকগুলো নাম না জানা গাছ দাঁড়িয়ে, ঘন সবুজ পাতায় ভরা ডালগুলো একবার নুইয়ে পড়ছে মাটিতে, পরক্ষণেই সোজা হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে আবার। নাম না জানা ফুলে ভরে গেছে রাস্তাটা। সূর্য মেঘের আড়াল থেকে উঁকি মারছে মাঝে সাঝে। সামনেই দু তিনটে কুকুরছানা খেলে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক, সামনের গাছের গুঁড়ির কাছে গিয়ে উপরে ওঠার ব্যর্থ চেষ্টা করছে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে, এরকম মাতাল হাওয়া সাধারণত সমুদ্রের ধারে দেখা যায়, আর এই পাগল হাওয়ার সাথে বহুদিনের পুরোনো স্মৃতি জড়িয়ে আছে অয়ন্তিকার। খানিকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে মন চাইছিল আজ অনেক দিন পর, কিন্তু হাতে সময় বড় কম। এই ঘোড়দৌড়ের জীবনে সময় টাই বড় কম হাতে। একটু প্রকৃতির দিকে মন ভরে তাকানোর সময় ও যে নেই। অথচ এ অয়ন্তিকাই এই প্রকৃতি, এই সবুজের মাঝে নিরালায় থাকতে বড় ভালোবাসত।
উত্তম আরেকবার ডাক দিল। মিটিং এর আগে সাধারণত এরকম অন্যমনস্ক ও সচরাচর হয় না ও। কিন্তু আজ এই নির্মল পরিবেশটাই যেন সমস্ত হিসেবে নিকেশ ভুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আর দেরি করা যাবে না। এবার বেরোতেই হবে। গাড়িতে উঠে পড়ল ওরা।
গাড়ি চলতে চলতে কখন যে চোখ লেগে গেছিল অয়ন্তিকার কে জানে। প্রতিটা লং জার্নির এই সময়টাকেই ও ভীষণ সুন্দর ভাবে ব্যবহার করে নে য় বাইরে প্রকৃতিটা কে মন প্রাণ ভরে দেখে। নয়তো বাকি দিন গুলোয় মেইল, মিটিং, ল্যাপটপ এসবের বাইরে মুখ তোলার সময়টুকুই বা কোথায় থাকে। আজকেই যা কোনভাবে চোখটা লেগে গেল ওর। আর চোখটা খুলতেই যেন একসাথে অনেকগুলো ধূসর স্মৃতি পরপর ভিড় জমাতে লাগল মাথার মধ্যে। এই জায়গাটা অনেক বদলে গিয়ে ও অনেকটা এক রয়ে গেছে যে। মারাত্মক অস্বস্তি হচ্ছিল অয়ন্তিকার, কিন্তু রিএক্ট করতেও পারছিল না। কি বলবে? একটা রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে বলে কিই বা বলা যেতে পারে? জোরে শ্বাস নিল ও একবার, নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল। উত্তমের দিকে তাকাল এবার।
“এই রাস্তা দিয়ে তো যাওয়ার কথা ছিল না উত্তম। “
এটুকুই বলল শুধু, উত্তমের দিকে সরাসরি তাকিয়ে মাথা নেড়ে জানতে চাইল অয়ন্তিকা।
এতদিন ম্যাডামের সাথে কাজ করার সুবাদে কখন ম্যাডাম ভালো মুডে আছেন আর কখন ঝড়ের পূর্বাভাস সেটুকু বোঝে উত্তম। এখন বেশি কিছু বলা যে উচিত হবে না তা ম্যাডামের শক্ত চোয়াল দেখেই বুঝে নিয়েছে ও। তাও উত্তরটুকু তো দিতে হবে, আমতা আমতা করে বলল, ” আসলে ম্যাডাম এই রাস্তা দিয়ে হাইওয়ে ধরলে অনেকটা সময় বাঁচছে দেখলাম, নয়তো মিছিলের জন্য এমনিতেই অনেকটা… ” আর কিছু বলতে পারল না উত্তম। হাতের ইশারায় ওকে চুপ করতে বলল অয়ন্তিকা। আর কিছু বলার ক্ষমতা ওর নেই কাজেই চুপ করে গেল ও। একবার খালি আড়চোখে ম্যাডামের মুখটা দেখে বোঝার চেষ্টা করল ওর উত্তরে ম্যাডাম আদৌ প্রসন্ন হল কি? কিন্তু মুখের ভাবভঙ্গি তে তো তা মনে হল না। চোখ দুটো একবার বুজল অয়ন্তিকা। ভীষণ জ্বলছে চোখদুটো, কেউ যেন লঙ্কাবাটা ঘষে দিয়ে গেছে দুই চোখে। অনেকগুলো সাদাকালো ছবি পরপর ভিড় জমেছিল বন্ধ চোখের ওপারে। না, ছবি গুলো রঙিন নয়, সাদাকালোই। চোখ দুটো খুলে ফেলল ও, চোখ দুটো যে ভিজে সেটা বুঝতে পারা মাত্রই ব্যাগ থেকে রুমালটা নিয়ে নিজেকে তৎক্ষণাৎ সামলে নিল ও। সিগনালে দাঁড়ালো গাড়িটা, সামনেই একটা মন্দির আছে জানে ও। খুব জাগ্রত, বহু মানুষ আসেন এখানে পুজো দিতে। পুজো দিয়েই ফিরছে মনে হয় এক মা তার ছোট্ট ছেলে কে সঙ্গে নিয়ে। অয়ন্তিকাও এসেছে এই মন্দিরে পুজো দিতে, অর্জুনের সাথে !
গাড়ির বিকট হর্ণে জেগে উঠল যেন ও, কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছিল আবার। পাশের গাড়িটা হর্ন বাজাল ভাগ্যিস। আর দাঁড়াল না ওরা, এগিয়ে গেল খানিকটা। বাতাসিপুরের কত কিছু আজ বদলে গেছে। আগে এত দোকানই ছিল না, শপিং মল হয়েছে কতগুলো। কত ফাস্ট ফুড মোমো পিজ্জার দোকান, এসব কিছু ছিল না আগে। যদিও সময় টাও তো বয়ে গেছে অনেকটাই, ঝট করে হাতের কর গুনে নিলো একবার, এগারো বছর পেরিয়ে গেছে ! বদলানো তো স্বাভাবিক। সময় তো আর দাঁড়িয়ে নেই। হু হু ছুটে চলেছে ওর গাড়ি, গাড়ির কাঁচটা নামিয়ে বাতাসিপুরের বাতাসটা কি একবার অনুভব করবে হাতের আঙুলে ? আর কখনো আসা যদি না হয়? আর যদি সুযোগ না আসে? খানিক ভেবে জানলার কাঁচ টা খুলল এবার অয়ন্তিকা। আঙ্গুলগুলো বের করে ছুঁল বাতাসিপুরের বাতাসটাকে।
“ac টা অফ করো তো উত্তম, বাইরে দারুণ হাওয়া দিচ্ছে।” জানলার কাঁচটা খুলে দিল অয়ন্তিকা। উত্তম খানিক অবাকই হল, ম্যাডামের এরকম আচরণ এত বছরে ও কখনও দেখেনি। অয়ন্তিকা ম্যাডামকে বরাবর এই সবকিছুর থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই দেখেছে উত্তম, বড় মানুষের বড় বড় ব্যাপার ! আজ সেই মানুষটারই এরকম ভিন্ন আচরণে অবাক হওয়াই স্বাভাবিক। তবে কিছু প্রশ্ন করার ক্ষমতা নেই ওর, চুপচাপ ac টা নিভিয়ে দিল ও।
এই জায়গাটায় কিছু আগে হয়তো বৃষ্টি হয়ে গেছে, মাটির সোঁদা গন্ধ টা নাকে লাগল অয়ন্তিকার, খুব প্রিয় এই গন্ধ টা ওর। একটা সময় এই বাতাসিপুরের সব কিছুই ওর খুব ভালো লাগতো। এখানকার মানুষজন ,তাদের ভাষা, তাদের জীবন যাত্রা সব কিছুই অনেক আলাদা ছিল, তাও খুব ভালো লাগত ওর। হয়তো ভালো লাগার কারণটা অর্জুনই ছিল। এই তো সামনের রাস্তাটা পেরিয়েই সম্ভবত ওই পার্কটা, কি যেন নাম ছিল। অনেক গুলো বিকেল, অনেক সূর্যাস্ত ওখানে একান্তে কাটিয়েছে ওরা দুজন। চলতে চলতে বেশ জোরে ব্রেক কষল ওদের গাড়িটা আবার, বিরক্ত হয়ে তাকাল ও, ড্রাইভার কে কিছু বলার আগেই সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল অয়ন্তিকা, ড্রাইভার কে বিশেষ কিছু বলার নেই এখানে। আপন খেয়ালে একটি গরু দাঁড়িয়ে রয়েছে রাস্তার মাঝে। অগত্যা পাশ কাটিয়ে এগোল আবার গাড়িটা। আজ ভাবতেও অবাক লাগে একদিন এখানেই থাকতো অয়ন্তিকা, আজ ভাবলেও… কি ভাবে পারতো ও? অথচ এখন যে ওই ইট কাঠ পাথরে ঢাকা ধূসর নগরী থেকে বেরিয়ে এই সবুজে ফিরতেই ওর ইচ্ছে করে সেটা ও কি করে অস্বীকার করবে? একদিন স্বেচ্ছায় এই সবুজকে ছেড়ে ওই অফিসের কেবিন, প্রতিদিনের ইঁদুরদৌড়, ঘুম না আসা রাত, ধূসরটাকে আপন করে নিয়েছিল ও। সামনের মোড়টাতে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আইস ক্রিম খাচ্ছে, একটা ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে। এই দৃশ্যটা যেন ভীষণ রকম পরিচিত, এক নিমেষের মধ্যে ওই ছেলে মেয়ে দুটোকে না, সেই জায়গায় নিজেকে আর অর্জুনকেই দেখছিল ও। কম বয়সে মেয়েটার মতোই দেখতে ছিল তো ওকে, তখন তো এত পরিচর্চা, এত বহুমূল্য প্রসাধন এসবের বালাই ছিল না। এতটাই সাধারণ, সাদামাটাই ছিল অয়ন্তিকাও। বিয়ের পর নতুন বৌ কপালে সিঁদুর, শাঁখা পলা নোয়া এইসব নিয়েই ওর সাজ সম্পূর্ণ হতো। অর্জুন বলত ওকে শাড়ি পড়লে নাকি ভীষণ সুন্দর লাগে, শাড়ি পড়তে জানত না অয়ন্তিকা, শাশুড়িমা-ই সাজিয়ে দিতেন। বড় ভালোবেসে আগলে রাখতেন ওই মানুষটাও। ওই দেখো, ওই দোকান টা! এই দোকান থেকে কত বার কত কি কিনে খাতায় লিখিয়ে যেত ও, কি নাম ছিল যেন কাকুর? ও হ্যাঁ, রমেন কাকু, ভীষণ স্নেহ করতেন অয়ন্তিকাকে। এখনো কি আছে রমেন কাকু? দোকানটা আগের থেকে বড় হয়েছে। আগে শুধু কেক চকলেট চিপস ই থাকতো এখন তো অনেক কিছু সাজানো।
“এই একটু দাঁড়াও তো ” ড্রাইভারকে দাঁড়াতে বলে একঝলক দেখল ও, পুরোনো স্মৃতির নির্যাসটা খুঁজছিল হয়তো মনে প্রাণে।
“ম্যাম এখান থেকে কিছু নেবেন কি? নিয়ে আসব?” স্বভাবতই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল উত্তম, হাতের ইশারায় চুপ করতে বলল ওকে অয়ন্তিকা সেন। একমনে তাকিয়ে ছিল ও, কত্ত বুড়ো হয়ে গেছে মানুষটা! কুঁজ হয়ে গেছেন, সঙ্গে একজন আরো রয়েছেন দোকানে, মুখের মিল আছে, ছেলে হয়তো, রমেন কাকুর বয়সের ভারে নুইয়ে যাওয়া শরীরটা, পাকা দাড়ি গোঁফ চুল আরো ভালো করে যেন বুঝিয়ে দিল কতটা সময় পেরিয়ে এসে আজ আবার এখানে দাঁড়িয়ে অয়ন্তিকা। নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ ও, হঠাৎ করে দোকানের সামনে এত বড় দামি একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখে রমেনকাকু ও যেন খানিক পরে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন কিছু। কিন্তু কাঁচের ওপারে তো কিছুই চোখে পড়ল না।
নাহ এবার এগোনো উচিত, নিজেকে এটাই বলল অয়ন্তিকা। যত থাকব তত জড়িয়ে পড়ব আবার।
“চলো উত্তম।” আর না দাঁড়িয়ে এগোল অয়ন্তিকা সেনের মার্সিডিস। চোখ দুটো চেষ্টা করেও বন্ধ করতে পারছে না ও, মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করছে, আর যদি দেখতে না পায়! অথচ এইসব কিছু থেকে ও তো বেরিয়ে গেছে বহুদিন। তাহলে কি আসলে ও পারেনি বেরোতে আজ ও ? ওর আর অর্জুনের ভেঙে যাওয়া সংসার টা এখনো কি কোথাও ছিটেফোঁটা হলেও জড়িয়ে রেখেছে ওকে এই বাতাসিপুরের সাথে? তা কি করে হয়? ও তো স্বেচ্ছায় এই বাতাসিপুর, মুখার্জী বাড়ি, অর্জুন সব কিছু ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল। রাম এর সাথে ওর বিগত সাত বছরের সুখী দাম্পত্য। তাহলে এসবের মানে কি? অর্জুন আর ওর ছয় বছরের প্রেমের বিয়েটা কেন যে ভেঙেছিল তা বাইরের লোকজন সমাজ তো বটেই ,ওর নিজের কাছেও এখনো ধোঁয়াশা। অর্জুন আর ওর পরিবার তো সবদিন সবরকম ভাবে অয়ন্তিকাকে সাপোর্ট করেছিল, ওর পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, কোনোকিছুতেই কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, বাধা আসতেও দেয়নি। তাও যে কিভাবে একটা পারফেক্ট সম্পর্কের মধ্যেও একটু একটু কুরে ঘুন ধরে গেল কে জানে। অর্জুনই প্রথম এসে ওর থেকে মুক্তি চেয়েছিল একদিন , আর অয়ন্তিকাও না করেনি। যেন অর্জুনের বলারই অপেক্ষা করছিল ও ,নাকি অয়ন্তিকার কথা বুঝেই অর্জুন এসে বলেছিল প্রথমে? না ,জানতে চায়নি ওরা দুজন দুজনের কাছে, শুধু মেনে নিয়েছিল নিঃশব্দে, আলাদা হয়ে গেছিল দুজন। আলাদা হতে গিয়ে ও তো অনেক বিনিদ্র রাত কাটিয়েছে অয়ন্তিকা, সাইকায়াট্রিস্ট এর সাহায্য ও নিতে হয়েছিল ওকে, তাও যেন মনে হয়েছিল একসাথে নয়, বরং আলাদাই ভালো থাকবে ওরা। অর্জুন আর ওর মধ্যে ঠিক কি হয়েছিল তা এখনো ওদের সমস্ত আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে একটা বিরাট প্রশ্ন। কিন্তু কিছুই তো হয়নি আসলে। একটা সম্পর্ক বরফের মতন শীতল হতে হতে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল, কেন তা জানে না ও। এত দূরত্ব কি ভাবে এলো ওদের মাঝে তার জন্য অনেকবার নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করেছে অয়ন্তিকা, কিন্তু উত্তর মেলেনি। না কোনো তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি ও নয়। তাহলে? নিজের লক্ষ্যের পিছনে এত দ্রুত গতিতে দৌড়েছিল অয়ন্তিকা, অর্জুন কি আর তাল মেলাতে পারলো না ওর গতির সাথে? বিনা বাক্যব্যয়ে বিনা অভিযোগে সবাইকে অবাক করে দিয়ে, প্রিয় মানুষ গুলোর চোখের জল ফেলিয়ে আলাদা হয়ে গেছিল ওরা সেদিন।
বামপাশের রাস্তাটা পিছনে ফেলে সামনের মোড়ের দিকে এগিয়ে গেল ওদের গাড়িটা। রাস্তাটার দিকে হাঁ করে তাকিয়েছিল অয়ন্তিকা। অদ্ভুতরকম ভাবে আর ওর চোখে মুখে আর সেই বিরক্তি ভাবটা নেই, তা পাল্টে যেন আরো একবার ফেলে আসা দিন গুলো চোখের দেখা দেখে নেয়ার আকুতি। পেরিয়ে অনেকটা এগিয়ে গেছে গাড়িটা, কিন্তু কিছুতেই ওর মনটা শান্ত হচ্ছে না কেন? যা হবে হোক ,নিজের সমস্ত শক্তি একত্র করে বলল অয়ন্তিকা ,” গাড়িটা ইউটার্ন নাও তো উত্তম। ওই বাম দিকের রাস্তা টা ধরো। “
” কিন্তু ম্যাম ওটা শর্ট হবে না ইনফ্যাক্ট অনেকটা ঘুরতে হবে… “
“যা বলছি সেটা করো উত্তম, ওই রাস্তাটা নাও। “
নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কথা কটা বলে দিলো অয়ন্তিকা। অয়ন্তিকা সেনের কথার অমান্য করার সাধ্যি এখন কজনেরই বা আছে ? ঘুরে এসে বাঁক নিলো ওর গাড়িটা , মনের ভিতর কি যে অনুভূতি হচ্ছিল ওর কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না ও। আচ্ছা উত্তম কি ম্যাডাম কে পাগল ভাবছে ? যে যা ভাবে ভাবুক, কে কি ভাবল সে নিয়ে আর এখন অয়ন্তিকা সেন মাথা ঘামায় না। সামনে একটা বড়সড় দল যাচ্ছে, মনে হয় কারো বিয়ে সেই উপলক্ষে কিছু হচ্ছে। সামনের দিকে তাকিয়ে খানিক চিন্তিত মুখেই উত্তম বলল , “একে সরু রাস্তা এদিকটায়, তার মধ্যে এদের বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান চলছে। এতবার হর্ন মারছি তাও কোনো দিক্পাত নেই, কি আশ্চর্য !”
ম্যামের দিক থেকে কিছু একটা কথা অন্তত এক্সপেক্ট করছিল উত্তম , কিন্তু কোনো কিছু না শুনতে পেয়ে পিছন ফায়ার তাকাল একবার উত্তম। ম্যাডাম এর মুখে বিরক্তির লেশমাত্র নেই, বরং হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে সামনের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে। ম্যাডামের চোখ অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকাল ও , প্রাসাদোপম বাড়ি। বোঝাই যাচ্ছে অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয়। চোখ মেলে খানিকক্ষণ দেখলো উত্তম ও। সামনের মহিলাদের ভিড়, ছোট ছেলেপুলেদের সেজে গুজে নাচানাচি পেরিয়ে গাড়ি কচ্ছপের গতিতে এগোতে লাগল। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল অয়ন্তিকা। এই বাড়িতেই ওর আর অর্জুনের রিসেপশন হয়েছিল। আশেপাশের মানুষগুলো ও এরকম ই খুশি ছিল ওদের নিয়ে। কত নাচ গান হৈ হুল্লোড় কত কত স্মৃতি… কি সুন্দর আলো ঝলমলে ছিল সেই সন্ধ্যেটা। সব বদলেছে কিন্তু এই বাড়িটার সাজ, চাকচিক্য এতটুকু কমেনি, একইভাবে স্বদম্ভে দাঁড়িয়ে। বুকের ভিতরটা যেন একটু বেশিই মোচড় দিচ্ছে, কেন এভাবে এগিয়ে চলেছে ও? কিসের মোহ কিসের টান কে জানে কিন্তু নিজেকে কিছুতেই আটকাতে পারছে না আর অয়ন্তিকা।
গাড়িটা অতিকষ্টে পেরোল ওই জায়গাটা, কিন্তু একটু গতি নিতেই আবার বাধা।
“দাঁড়াও, দাঁড়াও, এখানটাতেই দাঁড়াও…”
ম্যাডামের কথা মত আবার গাড়ি দাঁড় করাল উত্তম। ম্যাডাম এর মতিগতি বোঝা ভার, আড়চোখে ম্যাডাম এর দিকে তাকাল ও। কিন্তু এবার ও ও অবাক না হয়ে পারল না। কাজপাগল, রাগী, মেজাজি মানুষটার চোখ মুখ আজ এরকম কেন? দামি সানগ্লাসের নীচ থেকে গালের উপর বয়ে চলা অশ্রুধারা চোখ এড়াল না উত্তমের। গাড়ির ভিতরেও রোদ চশমা পরে থাকার কারণটা কি বুঝতে বাকি রইল না আর ওর। এই সময় কিছু না বলাই ভালো। ধৈর্য ধরে ম্যাডামের অর্ডারের অপেক্ষা করতে লাগল ও।
অয়ন্তিকা যেন আজ ঠিক এই কারণেই এখানে এসে উপস্থিত, সারা বিশ্ব চরাচরে কি হচ্ছে এসব নিয়ে যার কোন মাথা ব্যাথা নেই, সে আজ থেকে এগারো বছর আগের ফেলে যাওয়া খড়কুটোর সামনে এসে আরেকবার দাঁড়াবে বলেই যেন এসেছে। সাদামাটা দোতলা পেস্তা রঙের বাড়ি, বাড়ির নীচের গ্যারাজের দরজাটা খুলে গেল, একটা হাত দরজাটা ভিতর থেকে খুলে আবার চলে গেল। এই হাত বহু পরিচিত অয়ন্তিকার, হাতের উপরের কাটা দাগ, হাতে পরা চেনটা, সবটুকু চেনে ও। নিজের হাত মুঠো করে নিল অয়ন্তিকা, কিছুতেই ও রিঅ্যাকট করবে না, জাস্ট একবার দেখেই চলে যাবে। ব্যাস। দমটা যেন বন্ধ হয়ে আসছে আসতে আসতে, এই ac এর ঠান্ডা বাতাস ও বিরক্তিকর লাগছে যেন। চারপাশটা যেন থমকে গেছে কয়েক মুহূর্তের জন্য, গাছের পাতার নড়াচড়া থেকে পাখির ডাক, প্রকৃতির খোলা হাওয়া থেকে শ্বাস প্রশ্বাস সব যেন এক বিন্দুতে এসে থমকে গেছে। অবশেষে একজন বছর ৪৫-৫০ এর মানুষ বেরিয়ে এলো বাইকটা নিয়ে। কাঁচা পাকা চুল, পরনে আকাশি রঙের শার্ট, হেলমেটটা সাইড এ নিয়ে বাইকটা নিয়ে বেরোলো মানুষটা, এই এত গুলো বছরে চুল দাড়িতে পাক ধরার সাথে সাথে বদলে গেছে বাইকের ব্র্যান্ড, রং , চোখে উঠেছে চশমা। নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল অয়ন্তিকা, ওর অর্জুন কে দেখে। না না , আর তো ওর অর্জুন নয় , হঠাৎ পিছন ফিরে তাকাল অর্জুন, ভাবখানা এমন কারো যেন পিছনের সিট টায় বসার কথা ছিল, সে কি উঠতে পারল? ভারী মিষ্টি অথচ তীক্ষ্ণ গলার আওয়াজে চমকে তাকালোগ্যারাজের ভিতর দিকে অয়ন্তিকা। যেন নিশ্চিন্ত হতে চাইছে ওর বসার সিটটা পাকাপাকি ভাবে কেউ দখল করে নিয়েছে কিনা, অবশেষে তিনি এলেন। কত বয়স হবে আর, ছয় সাত বছর বড় জোর। পরনে স্কুল ড্রেস, মাথায় ঝুঁটি বাঁধা। বাবার মুখের সাথে ভীষণ মিল। মুগ্ধ হয়ে দেখছিল অয়ন্তিকা, বাবার পিছনে বাবাকে জড়িয়ে বসল সে, তবে তাকে বাইকে চাপিয়ে দিতে ছিল আরো একজন। বোধ করি এই-ই অর্জুনের বাইকের পিছনের সিট টার চিরস্থায়ী দাবিদার। হাতে শাঁখা পলা, নিতান্ত সাধারণ সাজপোশাকে একজন অতি ব্যস্ত গৃহিনী। অর্জুনের পরিবার , অর্জুনের সুখী পরিবার! একটা অদ্ভুত প্রশান্তি যেন ছড়িয়ে যাচ্ছে অয়ন্তিকার মনটায়। আর সেই বিরক্তিটা, সেই কষ্টটা হচ্ছে না। না আর ওর চোখে জল ও নেই। অর্জুন ভালো আছে যে। বাবা মা কেমন আছেন কে জানে। বাইকে স্টার্ট দেয়ার আগে কি কারণে কে জানে রাস্তার উল্টোদিকের দাঁড়ানো দামি গাড়িটার দিকে এবার চোখ পড়ল অর্জুনের। ও কি কিছু বুঝতে পারল? না না ,তা কি করে সম্ভব, ও তো কাঁচের এপারে, আর কাঁচ ভেদ করে এপারের মানুষটাকে তো দেখতে পাওয়ার কথা নয়। এতক্ষণ যে এখানে এভাবে এরকম একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে বলে কি ওর সন্দেহ হচ্ছে ?অর্জুন বাইকটা স্ট্যান্ডে দিয়ে এদিকেই তো আসছে। না না, ও কিছুতেই ধরা দেবে না, এবার ওর যাওয়া উচিত, ইচ্ছে না করলেও যেতেই হবে ,আর না, কিছুতেই না। উত্তমকে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিতে বলল অয়ন্তিকা। শেষবারের মতন অর্জুনকে দুচোখ ভোরে দেখে নিয়ে বিদায় জানাল ও নিঃশব্দে।
“সামনে একটা খুব সুন্দর ড্যাম আছে উত্তম, এই রাস্তাটা ধরে এগিয়ে ডানদিকে। চলো তো। তারপর বেরিয়ে যাবো আমরা এখান থেকে।”
অর্জুন হয়তো অয়ন্তিকার উপস্থিতি অনুভব করেছিল, হয়তো বা নয়। কিন্তু অয়ন্তিকার মনটা আজ আজ অনেক হালকা লাগছে। শান্ত লাগছে নিজেকে অনেকটা, ভাগ্যিস ও এসেছিলো!
এই ড্যামটা ওর প্রাক্তন শ্বশুরবাড়ি থেকে খুব একটা দূর নয়, আধ ঘন্টার রাস্তা। বিয়ের পর প্রথম ওরা দুজন এখানেই বেড়াতে এসেছিল, ভ্যালেন্টাইন্স ডে ছিল সেদিন, আজ আবারো সেই একই জায়গায় সুবিস্তৃত জলের সামনে দাঁড়িয়ে ও একা। যতদূর দেখা যায় শুধুই জল আর ধোঁয়া। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল ও কিছুক্ষণ, একান্তে। নিজের ব্যাগের অব্যবহৃত খাপটা থেকে বের করল ও আংটিটা। যেটা এতদিন ধরে বয়ে নিয়ে চলছিল ও। এই জন্যই কি কিছুতেই মুক্ত হতে পারছিল না ও এত বছরেও? এই জন্যই কি মনের ভিতর থেকে পাথরটা সরাতে পারছিল না কোনোদিন, হাতে নিল আংটিটা ,বৌভাতের রাত্রে ওর অনামিকায় সযত্নে এই আংটিটাই পরিয়ে দিয়েছিল ওর অর্জুন। একটা ছোট্ট লাল পাথর বসানো আংটিটা আজ অব্দি নিজের কাছছাড়া করতে পারেনি ও। কিন্তু এবার সময় এসে গেছে। আংটিটা হাতে নিয়ে চোখদুটো বুজে ফেলল অয়ন্তিকা। পরপর স্মৃতি গুলো ভিড় করছিল চোখে সিনেমার মতো। আঁকড়ে রয়েছে এখনো আংটিটা, কিন্তু এই বন্ধনের তো আর কোনো দাম নেই। আর আঁকড়ে থেকে লাভ কি। ওরা দুজনেই তো নিজেদের জীবনে এগিয়ে গেছে অনেকটা, তারপর এই বন্ধন তো নিষ্প্রয়োজন। সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে , হাতের মুঠো আলগা করতেই হবে ওকে, আর কিছু ভাববে না ও, শুধু অর্জুনের হাসি মুখটা ভেসে উঠলো ওর চোখে, ওর সুখী পরিবারের ছবিটা ভেসে উঠল ওর চোখে, নাহ আর অসুবিধা হয়নি। হাতের মুঠো আলগা হলো অবশেষে, হারিয়ে গেল জলের তলায় এতদিন ধরে আঁকড়ে রাখা মুহূর্তটা। একটা বড় কাজ সম্পন্ন হলো আজ। আজ ও সত্যি মুক্ত। না আর কোনো কষ্ট নেই বরং অনেকটা হালকা লাগছে, হাসল এতক্ষণে অয়ন্তিকা। ” তোমার সাথে এই জন্মে সংসার হলো না না হয়, কিন্তু অন্য কোনো পৃথিবীতে কখনো কোথাও, অন্য কোনো জন্মে, আমাদের দেখা হবে আবার। “
ফোনটা বেজে উঠলো, রামানাথ কৃষ্ণান আইয়ার, পতিদেব।
“হ্যালো “। গাড়ি তখন বাতাসিপুর ছাড়িয়ে হাইওয়ের পথে।