রুপাঞ্জেল


রূপকথার সবচেয়ে বিখ্যাত চরিত্র বোধহয় রুপাঞ্জেল চরিত্রটি। যার ছিল অনেক লম্বা চুল। বাস্তবেও আমরা অনেক সময় লম্বা কারো চুল দেখলেই রুপাঞ্জেল চরিত্রটির সাথে তুলনা করি। এক দম্পত্তি একাকী বাস করত একটি বাড়িতে। তাদের পাশেই জঙ্গলের মধ্যে গোথেল নামক এক ডাইনী থাকতো। এক রাতে, লোকটি জঙ্গলে গেল তার অন্তঃস্বত্তা স্ত্রীর জন্য খাবারের সন্ধানে। কিছু ফল আর সবজি নিয়ে ফিরল সে। তার স্ত্রী এগুলো দিয়ে একটি সালাদ তৈরি করল। সালাদটির খুব সুস্বাদু হওয়ায় সে আরো একটু খেতে চাইল। তাই লোকটি দ্বিতীয়বার জঙ্গলে গেল খাবারের সন্ধানে। কিন্তু এবার জঙ্গলের দেয়াল বেয়ে বেরিয়ে আসার সময় ডাইনী গোথেল তাকে ধরে ফেলল এবং তাকে শাস্তি দিতে উদ্যত হল চুরির অভিযোগে।

লোকটি অনেকবার ক্ষমা চাইল। সে তার ক্ষুধার্ত স্ত্রীর কথা বলল। কিন্তু গোথেলের মন গললো না এতে। শেষমেশ গোথেল তাকে এক শর্তে মুক্তি দিতে রাজি হল। শর্তটি হল, যখন তাদের বাচ্চা জন্ম নিবে তখন সেই বাচ্চাটিকে গোথেলকে দিয়ে দিতে হবে। কোনো উপায় না দেখে অবশেষে লোকটি এই শর্ত মেনে নিল। তার কিছুদিন পর তাদের একটি মেয়ে জন্ম নিল। শর্তমতে, গোথেল সেই মেয়েটিকে নিয়ে গেল তার কাছে। গোথেল মেয়েটির নাম দিল রুপাঞ্জেল।

ধীরে ধীরে রুপাঞ্জেল বড় হয়ে ঊঠল। সে হয়ে উঠল খুব সুন্দরী আর তার ছিল অনেক লম্বা সোনালী চুল। যখন তার বয়স ১২, তখন গোথেল তাকে গভীর জঙ্গলে কাঠের তৈরি অনেক উঁচু একটি ঘরে বন্দী করে রেখে দিল। সেই ঘরটির কোনো দরজা ছিল না। শুধু ছিল একটি জানালা। গোথেল মাঝেমাঝে রুপাঞ্জেলকে দেখতে আসতো। তখন রুপাঞ্জেল তার লম্বা সোনালী চুল জানালা দিয়ে মেলে দিত। সেই চুল বেয়েই উপরে উঠত গোথেল।

এভাবেই দিন চলছিল। একদিন এক রাজকুমার সেই জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে একটি মিষ্টি মেয়েলি কণ্ঠে গান শুনতে পেল। সে তার চারপাশে খুঁজতে লাগল মেয়েটিকে। তারপর সে কাঠের টাওয়ারটি দেখতে পেল, যার জানালা দিয়ে গানটি ভেসে আসছিল। কিন্তু সেই জানালার কাছে পৌঁছানোর উপায় জানা ছিল না রাজপুত্রের। অবশেষে সে একদিন উপায় পেল গোথেলের চুল বেয়ে উপরে উঠা দেখে। গোথেল চলে গেলে সেও একইভাবে উপরে ঊঠে গেল এবং রুপাঞ্জেলকে দেখতে পেল।

রাজকুমার রুপাঞ্জেলকে বিয়ের প্রস্তাব দিল। রুপাঞ্জেলও তাতে সায় দিলে রাজকুমার তাকে উদ্ধার করতে চাইল এই বন্দীদশা থেকে। তাই রাজকুমার তাকে একটি রেশমের কাপড়ের টুকরা দিয়ে গেল যেটা দিয়ে মই বানিয়ে রুপাঞ্জেল নিচে নেমে আসতে পারবে। তারপর থেকে রাজকুমার প্রতিরাতেই সেখানে যেত রুপাঞ্জেলের সাথে দেখা করতে। কিন্তু এর মাঝেই একদিন ডাইনি গোথেল সব জেনে গেল। সে ক্রোধে রুপাঞ্জেলের চুল কেটে দিল আর তাকে আরো গভীর এক জনহীন জায়গায় পাঠিয়ে দিল যাতে রাজকুমার তার খোঁজ না পায়।

এক রাতে রাজকুমার টাওয়ারের নিচে গিয়ে রুপাঞ্জেলকে ডাক দিতেই গোথেল রুপাঞ্জেলের কাটা চুল নিচে মেলে দিল। রাজকুমার উপরে গিয়ে রুপাঞ্জেলকে দেখতে পেল না। তার বদলে দেখল গোথেলকে। রুপাঞ্জেলকে আর কোনদিন দেখতে পাবে না বলে সে সেখান থেকে লাফ দিল। মাটিতে পড়ে থাকা কিছু পাথরে আঘাত লেগে সে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলল। এভাবে অনেকমাস কেটে গেল। তারপর একদিন রাজকুমার আপনমনে বনের মাঝে হাঁটছিল। হাঁটতে হাঁটতে সে আরো গহীন জঙ্গলে এসে পৌঁছাল।

এমন সময় সে রুপাঞ্জেলের কণ্ঠে গান শুনতে পেল। রুপাঞ্জেলও রাজকুমারকে দেখে ছুটে এল। এভাবেই তারা আবার মিলিত হলো আর রুপাঞ্জেলের স্পর্শে রাজকুমার আবার তার দৃষ্টি ফিরে পেল। জনপ্রিয় এই রূপকথার গল্পটির উৎপত্তি জার্মানিতে। গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৬৯৮ সালে। ধারণা করা হয়, গল্পটি ইতালিয়ান গল্প ‘রুবাদা’ থেকে অনুপ্রাণিত যেটি ১৬৩৪ সালে প্রকাশিত হয়। রুপাঞ্জেল গল্পের কাহিনী নানান সময়ে ব্যবহৃত হয়েছে অনেক অ্যানিমেটেড সিনেমায়। তাছাড়াও বাচ্চাদের খেলার পুতুল তৈরিতেও রুপাঞ্জেলের চেহারার আদল ব্যবহার ও সমানভাবে জনপ্রিয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *