‘সোনার খাঁচায় ময়না পাখি’ (৭)


মালেক মুহাম্মাদের হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেল ছোট পরীর কথা। আনমনে তাই পেছনে তাকালো। তাকাতেই তার চোখ তো ছানাবড়া। পরীদের সাত বোন তাদের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে একেবারে। মালেক ছয় সহোদর ভাইকে নদীর দিকে পাঠিয়ে নিজে তাদের পেছনে রয়ে গেল। ওই ছয় ভাই বলছিল: তুমি কেন পেছনে থাকছো? ওরা তো এসে গেল বলে…!

মালেক মুহাম্মাদ বলল: তোমরা যাও! আমি মারা গেলে তো সমস্যা নেই। কেননা আমি তো তোমাদের কেউ নই। কিন্তু তোমাদের ছয় ভাইয়ের কোনো একজনের ক্ষতি হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরকম সংশয় উৎকণ্ঠার মধ্যেই তারা গিয়ে পৌঁছে গেল নদীতে। কিন্তু মালেক মুহাম্মাদ নদীতে পা বাড়াতেই পরীদের বড় বোন তার ঘোড়ার লেজ টেনে ধরে ফেললো। এ অবস্থা দেখে ছোট পরীও তার হাতের তলোয়ার দিয়ে এক কোপে ঘোড়ার লেজ কেটে দিল।

ব্যাস্ … মালেক মুহাম্মাদ নিশ্চিন্তে গিয়ে পৌঁছল নদীতে। পরীদের বড় বোন ছোট বোনকে বলল: তুই কী করলি এটা!

ছোট পরী বলল: আমি তো ওর মাথাটাকে দুই টুকরা করে ফেলতে চেয়েছি কিন্তু আল্লাহ বোধ হয় ওদেরকে আমাদের হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছেন, নৈলে ঘোড়ার লেজে কেন লাগবে! যাকগে, এখন দুঃখ করে আর কী হবে!

পরীদের নদী পার হবার অনুমতি নেই। অগত্যা তারা ফিরে গেল আপনগৃহে। এদিকে নদী পেরিয়ে মালেক মুহাম্মাদ তার ভাইদের বলল: ভীষণ এক বিপদ থেকে বাঁচা গেল। যাক। তোমরা এখন যার যার পরিবারের কাছে ফিরে যাও! আমি যাচ্ছি সোনার খাঁচা আর ময়না পাখির সন্ধানে। যদি ভালোয় ভালোয় ফিরে আসি তাহলে একসাথে যাব। তাই হলো। ছয় ভাই ফিরে গেল শহরে আর মালেক মুহাম্মাদ গেল মরুপ্রান্তরের দিকে।

যেতে যেতে অনেকদূর পেরিয়ে যাবার পর মালেক দেখল এক দরবেশ তার দিকে আসছে। কাছে এসে ওই দরবেশ তাকে বলল: হে যুবক! এসো! আমরা একটা বিষয়ে চুক্তি করি।

মালেক বলল: কীসের চুক্তি!

দরবেশ বলল: তুমি তোমার তলোয়ার আর ঘোড়াটা আমার কাছে দেবে আর আমি আমার এই পাত্র, দস্তরখান আর লম্বা লাঠিটা তোমাকে দেব।

মালেক বলল: এগুলোর বৈশিষ্ট্য কী?

দরবেশ বলল: পাত্রটা হাতে নিয়ে যত মেহমানই তোমার আসে শুধু ভেতরে হাত রেখে বলবে: হে সোলায়মান নবী! আমার মেহমান আছে। এরপর পাত্র থেকে যতই খাবার নেবে কমবে না। দস্তরখানের বৈশিষ্ট্য হলো এটা বিছিয়ে সোলায়মান নবীকে স্মরণ করে বলবে আমার মেহমান আছে। তারপর যতই রুটি নেবে শেষ হবে না। আর লাঠিটা হাতে নিয়ে বলবে: আমি অমুকের মাথাটা চাই। অমনি মাথাটা লাউয়ের মতো কাটা হয়ে যাবে।

পাঠক! আপনাদের কী মনে হয়, মালেক মুহাম্মাদ কি দরবেশের প্রস্তাবে রাজি হবে? হ্যাঁ! রাজি হয়ে গেছে সে এবং নিজের ঘোড়া আর তলোয়ার দরবেশ দিয়ে পাত্র, দস্তরখান আর লাঠিটা নিয়ে দিল। আর দরবেশ তলোয়ারটা কোমরে ঝুলিয়ে ঘোড়ায় চড়ে চলে গেল। মালেক মুহাম্মাদ দরবেশের দেয়া জিনিসগুলোকে একবার পরীক্ষা করে দেখতে চাইলো। লাঠিটা হাতে নিয়ে বলল: হে সুলায়মান নবী! এই দরবেশের মাথাটা ফেলে দিতে চাই। বলতে না বলতেই দরবেশের মাথা কেটে গেল। মালেক ভেবেছিল দরবেশ হয়তো ওই তলোয়ার দিয়ে কাউকে অন্যায়ভাবে খুন করবে। সেজন্য পরীক্ষার শুরুতেই বেছে নিয়েছিল লাঠিটাকে।

মালেক মুহাম্মাদ এবার ঘোড়ায় চড়ে তলোয়ারটা কোমরে ঝুলিয়ে ফিরে চললো পরীদের কেল্লার দিকে। ছোট পরী মালেককে দেখে বলল: তোমার কি জীবনের ভয় নেই। আমার বোনেরা তোমাকে দেখলে জীবিত রাখবে না। মালেক বলল: আল্লাহ মহান।

ছোট পরী বলল: যদি আমার বোনেরা না থাকতো তাহলে আমরা নিশ্চিন্তে কাটাতে পারতাম। কোনোরকম টেনশন থাকতো না।

মালেক বলল: তুমি কিছু মনে না করলে বলি.. এদের হত্যা করা আমার কাছে পানি খাবার মতোই সহজ।

ছোট পরী রাজি হয়ে গেল এবং মালেক তার হাতের লাঠিটা তুলে বলল: হে সোলায়মান নবী! আমি চাই ওই ছয় বোনের মাথা লাউয়ের মতো কেটে ফেলতে।

এই বলে মালেক পরীকে বলল: যাও গিয়ে দেখো তোমার বোনদের কী অবস্থা!

পরী ভেতরে গিয়ে দেখলো ছয় বোনেরই মাথা কেটে পড়ে আছে। খুশিতে সে নাচতে নাচতে ফিরে এসে মালেককে বলল: হ্যা! বোনেরা মারা গেছে। এখন আমরা নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করতে পারব।

মালেক মুহাম্মাদ বলল: কিন্তু আমার তো দূরের সফর আছে, চলে যেতে হবে।

পরী বলল: আমি জানি! তুমি সোনার খাঁচা আর ময়না পাখির সন্ধানে আছো। কিন্তু তুমি আমার সাহায্য ছাড়া এ কাজে যেতে পারবে না।

মালেক বলল: কেন?

পরী বলল: কারণ যেখানে এই খাঁচা আর ময়না রয়েছে সে স্থানটি এখান থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দূরে। তার ১২০ কিলোমিটার জুড়ে চিতাবাঘের বাস। ১২০ কিলোমিটার জুড়ে বাঘ সিংহের বাস আর ১২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে দৈত্যদানবের বাস।

তুমি যেই সোনার খাঁচা আর ময়নার খোঁজ করছো সেই খাঁচা পরীদের বাদশার মেয়ের মাথার উপরে রাখা। শহর থেকে ওই মেয়ের প্রাসাদে যেতে সাতটি দরোজা আছে। প্রতিটি দরোজার পাহারায় রয়েছে দৈত্যরা। সপ্তম দরোজার প্রহরী সাত মাথার দৈত্য। কী করে তুমি এগুলো পেরুবে, আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি, মনোযোগ দিয়ে শোনো।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *