জ্যাক অতি দরিদ্র একটি ছেলে। সে তার বিধবা মায়ের সাথে একটি ছোট্ট কুটিরে থাকতো। গোয়ালঘরে থাকা একটি গরুই ছিল তাদের একমাত্র সম্বল। গরুর দুধ বিক্রি করেই চলতো তাদের সংসার। একসময় গরুটি দুধ দেওয়া বন্ধ করলে জ্যাকের মা তাকে গরুটি বিক্রি করে টাকা নিয়ে আসতে বলে। মায়ের কথামত জ্যাক গরুটি বিক্রি করতে বাজারে যায়। কিন্তু পথিমধ্যে জ্যাকের সঙ্গে একজনের দেখা হয়, যে গরুটির বদলে তাকে কিছু জাদুর শিমের বিচি দিতে চায়।
লোকটি জ্যাককে আশ্বাস দেয়, এই শিমের বিচি তাদের সব কষ্ট দূর করে দিবে,তাদের প্রচুর অর্থ আয় হবে। জ্যাক লোকটিকে বিশ্বাস করে তাকে গরুটি দিয়ে দেয় আর কিছু শিমের বিচি নিয়ে ঘরে ফিরে আসে। কিন্তু যখন জ্যাক কোনো টাকা ছাড়াই ঘরে ফিরে আসলে তার মা ভীষণ রেগে গিয়ে শিমের বিচিগুলো মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। রাতের খাবার ছাড়াই জ্যাককে বিছানায় পাঠিয়ে দিল। জ্যাক খুবই আশাহত হয়ে বিছানায় চলে গেল।
এদিকে সেই রাতে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলা শিমের বিচিগুলো থেকে দৈত্যাকৃতির একটি লতানো শিম গাছ বেরিয়ে এল। পরদিন ভোরবেলা জ্যাকের ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে তার জানা্লা দিয়ে লতানো শিমগাছটি দেখে বাইরে বের হয়ে এল। তারপর সেই শিমগাছ বেয়ে সে একসময় অনেক উপরে পৌঁছাল। প্রায় আকাশের কাছাকাছি উচ্চতায়। সেখানে জ্যাক দেখল এক বিশাল দূর্গ। গুটিগুটি পায়ে জ্যাক প্রবেশ করল সেই দূর্গের ভিতরে।
দূর্গটির মালিক ছিল এক মানুষখেকো দৈত্য। সে জ্যাককে দেখতে পেয়েই বিকটস্বরে চিৎকার করে উঠল। সে জ্যাককে হত্যা করতে উদ্যত হলেও সে যাত্রায় জ্যাক কোনভাবে বেঁচে গেল। তারপর দৈত্যটি একসময় ঘুমিয়ে পড়লো। তখন জ্যাক একটি সোনার মুদ্রা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে নেমে এলো শিমগাছটি বেয়ে। তারপর জ্যাক আরো দু’বার শিমগাছ বেয়ে উপরে উঠল। প্রথমে একটি সোনার ডিম দেয়া হাঁস আর দ্বিতীয়বার একটি জাদুর বীণা নিয়ে আসল। জ্যাক ঘরে ফিরে তার মাকে এসব দেখাল।
জ্যাক মাকে বললো একটি কুড়াল আনতে। তারপর সেই কুড়ালটি দিয়ে জ্যাক শিমগাছের গোড়াটি কেটে দিল, যাতে দৈত্যটি নিচে আসতে না পারে। গাছটি কেটে দেওয়ায় দৈত্যটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। আর জ্যাক ও তার মা সুখে স্বচ্ছন্দে বসবাস করতে লাগল। তাদের আর কোন অভাব থাকল না। রূপকথার চরিত্র জ্যাক মূলত ইংল্যান্ডে সৃষ্টি। ধারণা করা হয়, এই গল্পটি সৃষ্টি প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। গত দশকে এই গল্পটি থেকে দুইটি সিনেমা তৈরি হয়েছে।