বীরবলের খিচুড়ি


শীত কালের এক শীতলতম দিনে আকবর এবং বীরবল একটি বড় দীঘির ধার ধরে হাঁটছিলেন।হঠাৎই আকবর থেমে দাঁড়ালেন এবং তার একটি আঙ্গুল প্রায় জমে যাওয়া সেই কনকনে ঠান্ডা জলে ডোবালেন এবং তৎক্ষণাৎ সেটি তুলে নিয়ে বললেন যে, “আমি মনে করি না যে কেউ এই ঠান্ডা জলে এক রাত কাটাতে পারবে বলে“। বীরবল সেটিকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করলেন এবং বললেন যে তিনি এমন একজনকে খুঁজে নিয়ে আসবেন যিনি এই কাজটি করতে পারবেন।আকবর তখন প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, যে সারা রাত ধরে এই দীঘির কনকনে ঠান্ডা জলে দাঁড়িয়ে কাটাতে পারবে তাকে তিনি 1000 স্বর্ণ মুদ্রা প্রদান করবেন।তক্ষুনি বীরবল এমন একজন গরীব মানুষকে খুঁজে পেলেন যিনি 1000 স্বর্ণ মুদ্রার জন্য রাজী হলেন সেই কনকনে ঠান্ডা জলে একরাত্রি কাটাতে।দুইজন রাজ সৈন্যের পাহারায় সেই দরিদ্র মানুষটি সারা রাত্তির সেই কনকনে ঠান্ডা জলে দাঁড়িয়ে থাকলেন।তার পরের দিন সকালে সেই গরীব মানুষটিকে রাজদরবারে নিয়ে যাওয়া হল পুরস্কার প্রদানের জন্য।যখন রাজামশাই তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তিনি কি করে সেই কনকনে ঠান্ডা জলে সারা রাত্রি দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন তখন সেই মানুষটি উত্তর দিলেন যে, “মহারাজ, আমি একটি প্রদীপের দিকে তাকিয়ে ছিলাম যেটি কিছুটা দূরে জ্বলছিল আর সারা রাত সেটির দিকে তাকিয়েই আমি কাটিয়ে দিলাম“।এই কথা শুনে মহারাজ বললেন যে, “এই মানুষটি কখনই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি নন কারণ তিনি প্রদীপের শিখা থেকে উষ্ণতা পেয়ে নিজেকে সারা রাত ধরে সেই দীঘির কনকনে জলে দাঁড় করিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন“।দরিদ্র মানুষটি মনে মনে অনেক দুঃখ পেলেন এবং হৃদয় ভঙ্গ হয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন।তারপর তিনি বীরবলের কাছে গেলেন সাহায্যের আশায়।তার পরের দিন বীরবল আর সারাদিন রাজ দরবারে গেলেনই না।বীরবল না আসায় আকবর নিজেই তার বাড়ি গেলেন তাঁর অনুপস্থিতির কারণটি জানতে।সেখানে পৌঁছে রাজামশাই অবাক হয়ে দেখলেন যে বীরবল আগুনের পাশে বসে আছেন এবং একটি হাঁড়ি তার প্রায় 6 ফুট উপর থেকে ঝুলছে।এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে, বীরবল বলেন যে, “প্রভু, আমি খিচুড়ি রাঁধছি“।ঠিক তখনই আকবর হাসতে শুরু করলেন এবং বললেন যে সেটি একেবারেই অবাস্তব।তখন বীরবল বললেন যে, “হে আমার রাজামশাই এটি বাস্তবেই সম্ভব।যদি একজন গরীব মানুষ তার কিছুটা দূরে থাকা একটি প্রজ্জ্বলিত প্রদীপের শিখার দিকে কেবল তাকিয়ে থেকেই সেটি থেকে উষ্ণতা লাভ করে নিজের দেহকে গরম করে তুলতে পারে, তবে আমিও এই একই পন্থায় খিচুড়িটি রান্না করতে পারব, তাই নয় কি মহারাজ?” আকবর তখন বীরবলের কথার সূত্রটি বুঝতে পারলেন এবং সেই গরীব মানুষটিকে তার চ্যালেঞ্জ পূরণ করার জন্য 1000 সোনার মুদ্রা দিয়ে পুরস্কৃত করলেন।

নীতিকথা

আশা মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *