-
শবযাত্রা
পুরোপুরি নাস্তিক মানুষের সংখ্যা এই পৃথিবীতে খুবই কম। ঘোর নাস্তিক যে-মানুষ তাকেও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে খুব দুর্বল দেখা যায়। আমি একজন ঘোর নাস্তিককে চিনতাম, তার ঠোটে একবার একটা গ্রোথের মতো হলো। ডাক্তাররা সন্দেহ করলেন ক্যানসার। সঙ্গে সঙ্গে সেই নাস্তিক পুরোপুরি আস্তিক হয়ে গেলেন। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্যে মসজিদে যান। মালিবাগের পীর সাহেবের মুরিদও হলেন। বায়েপসির […]
-
বেয়ারিং চিঠি
জমির সাহেব অফিস থেকে ফেরামাত্রই তাঁর বড় মেয়ে মিতু বলল, বাবা আজ তোমার একটা চিঠি এসেছে। বলেই সে মুখের হাসি গোপন করার জন্যে অন্যদিকে তাকাল। মিতুর বয়স একুশ। এই বয়সের মেয়েদের মুখে অকারণে হাসি আসে। হাসি তামাশা জমির সাহেবের একেবারেই পছন্দ নয়, বিশেষ করে মা-বাবাকে নিয়ে হাসাহাসি। আজকাল অনেক পরিবারেই তিনি এই ব্যাপার দেখেন। মেয়ে […]
-
ছায়াসঙ্গী
প্রতি বছর শীতের ছুটির সময় ভাবি কিছুদিন গ্রামে কাটিয়ে আসব। দলবল নিয়ে যাব- হৈচৈ করা যাবে। আমার বাচ্চারা কখনও গ্রাম দেখেনি- তারা খুশি হবে। পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি করতে পারবে। শাপলা ফুল শুধু যে মতিঝিলের সামনেই ফোটে না, অন্যান্য জায়গাতেও ফোটে তাও স্বচক্ষে দেখবে।আমার বেশির ভাগ পরিকল্পনাই শেষ পর্যন্ত কাজে লাগাতে পারি না। এটা কেমন করে জানি […]
-
কুকুর
কেমন আছেন প্রফেসর সাহেব? আমি মনের বিরক্তি গোপন করার প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতে বললাম, জী ভালো আছি। ভদ্রলোক হাসিমুখে বললেন, বসব খানিকক্ষণ? জী বসুন। আমি অবশ্যি কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরুব। আমাকে কি চিনতে পারছেন? জী না। ঐ যে মোড়ের সিগারেটের দোকানের সামনে আলাপ হলো। আপনি সিগারেট কিনছিলেন, আমি পান। আমি ভদ্রলোককে চিনতে পারলাম না। মোড়ের পানের […]
-
ওইজা বোর্ড
প্রায় আট বছর পর নাসরিনের বড় ভাই আলাউদ্দিন দেশে ফিরল। সঙ্গে বিদেশি বউ। বউয়ের নাম ক্লারা। বউয়ের চুল সোনালি, চোখ ঘন নীল, মুখটাও মায়া-মায়া। তবু মেয়েটাকে কারোই পছন্দ হলো না। যে-পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে নাসরিন বড় ভাইয়ের জন্যে অপেক্ষা করছিল, ভাইকে দেখে সে ঠিক ততখানি নিরাশ হলো। আট বছর আগে নাসরিনের বয়স ছিল নয়, এখন সতেরো। […]
-
তপন মোদক
দমদম স্টেশন থেকে ব্যারাকপুর যাব । ট্রেন আসতে দেরি আছে । সময় কাটানোর উপায় খুঁজছি। তিন নাম্বার প্লাটফরমে কলেজ ফেরত দশ বারো জন ছেলেমেয়ে হই হই করছে । এই জেনারেশানের কথাবার্তা আড়ি পেতে শোনার মধ্যে একটা মজা আছে । আর মেয়েগুলোও বেশ ঝকঝকে আর খোলামেলা। লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওদের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে বেশ […]
-
একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প
“কাকা, ফুচকায় আর একটু ঝাল দাও তো”- বলেই হাপুস হুপুস করে চোখ নাক মুছে আবার ফুচকাটা মুখে পুরল উদিতা । “ঝাল খেতে গিয়ে নাকের জল, চোখের জল এক হচ্ছে তবু খাওয়া চাই”- বলেই উদিতাকে ভালবেসেই দু ঘা বসাল রাহুল । উদিতা , রাহুলের কথায় বিশেষ কান না দিয়ে খাওয়ায় মনোনিবেশ করল । খাওয়া শেষে ফাউ […]
-
মনে মনে
রাহুলকে স্কুলবাসে তুলে দিয়ে এই একটু বসতে পেলাম, সকাল থেকে যা ঝড়টাই না যায়, রাহুলের টিফিন, তোমার টিফিন, বাড়ির কাজ, ঠাকুর ঘর… উফফ। সব সামলে একটু বসে যখন সামনের আয়নাটার দিকে তাকাই, চোখের পাশের রিংকলস, বা মাথায় রুপোলী আভাকে ছাপিয়ে সেই তন্বী-কেই খুঁজে বেড়ায় চোখ। আচ্ছা, শোনো না, অফিস পৌঁছে গেছ? এখনও ফোন করলে না […]
-
তুমি এলে তাই
হাতের গাছকৌটো, শাড়ির আঁচল আর মনের অনেকটা দ্বন্দ্ব সামলে যখন কনের সাজে বসলাম, তখন সন্ধ্যে নামছে। নতুন শাড়ী, গয়না, কত উপহার, কত লোকজন, হইহই, সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু আমি, এটা দেখে মনে মনে যে আনন্দ হচ্ছিল না, সেটা বলা ভুল। কিন্তু অনেক আনন্দের মাঝেও একটা ভীষণ রকম অন্তর্দ্বন্দ্ব কাজ করছিল। কারন একটাই, যে মানুষটার সাথে সারাজীবন কাটাতে […]
-
তুমি রবে নীরবে
“বাবু, তোকে আর কতবার বলতে হবে, রোজ একবার করে অন্তত প্র্যাকটিসটা করবি question bank টা। আজও তো করলি না।” পেটির মাছের পিসটা একমাত্র ছেলের বাটিতে তুলতে তুলতে কথাগুলো ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন তনিমাদেবী, ঋদ্ধির মা, একটি প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষিকা। ঋদ্ধি এই বছর উচ্চমাধ্যমিক দেবে, সঙ্গে ডাক্তারির যাবতীয় পরীক্ষাগুলোও। তাই, এই মুহূর্তে ঋদ্ধির স্নান খাওয়া ঘুম ছাড়া […]